শহরের বুকে কুমারীরূপে পূজিত হল মুসলিম মেয়ে ফতেমা, হাতে পদ্ম, কপালে চন্দন

Spread the love

সুভাষ বৈদ্য, কলকাতা: আজকের দিনে ধর্ম যেন বড় বালাই। অথচ শ্রীরামকৃষ্ণ দেব শিখিয়ে গিয়েছিলেন যে কোনও ধর্মমতই আসলে আলাদা আলাদা পথ, যা নাকি এক জায়গায় গিয়ে মিলেছে। এক মুসলিম মাঝির শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। বাঙালি তো কোনোদিন দুর্গা পূজাকে নিছক হিন্দুধর্মের মধ্যে আগলেও রাখেনি। কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান- এসব না দেখেই প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছে সবাই। আর এবার বিবেকানন্দের সেই আদর্শকে মনে করিয়ে দিতেই অষ্টমীর সকালে পূজিত হল ফতেমা। মুসলিম পরিবারের চার বছরের মেয়ে বাগুইআটির দত্ত বাড়িতে।
বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্ত বাড়ি৷ এবছর ছিল সপ্তম বর্ষের পুজো৷ যদিও প্রথম বছর থেকেই দত্ত বাড়িতে কুমারী পুজো হয়ে আসছে৷ তবে এবছরের কুমারী পুজোয় ছিল সম্প্রীতির বার্তা৷ রবিবার সকালে কুমারী রূপে যাকে পুজো করা হল, সে কোনও হিন্দু বা ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে নয়৷ মুসলিম পরিবারের চার বছরের এক কন্যা পূজিত হল কুমারী রূপে৷ এদিন ফতেমাকে তার মামা বাড়ি কামারহাটি থেকে গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় দত্ত বাড়িতে৷ সঙ্গে ছিল তার পরিবার৷ লাল বেনারসি শাড়ী, কপালে রক্ত ও শ্বেত চন্দনের টিপ,পায়ে আলতা দিয়ে সাজানো হয় ফতেমাকে৷

দত্ত বাড়ির এক তলায় যখন ফতেমাকে সাজানোর কাজ চলছে তখন নিচের ঘরে চলছে কুমারী পুজোর প্রস্ততি৷ এক সময় সুসজ্জিত ফতেমাকে কোলে করে নিয়ে আসা হয় দুর্গা প্রতিমার সামনে৷ সেখানে তাকে একটি সিংহাসনে বসানো হয়৷ তারপর নিয়ম মেনে কুমারী রূপে পূজিত হয় ফতেমা৷ তখন তার হাতে পদ্ম ও গলায় ফুলের মালা৷

বাড়ির কর্তা তমাল দত্ত পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার৷ তার স্ত্রী মৌসুমীও পেশায় একজন আইনজীবী৷ তমালবাবু বর্তমানে কামারহাটি পুরসভায় কর্মরত৷ তিনি জানান, ‘স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে অনুসরণ করে সমাজে সম্প্রীতির একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলাম৷ সেই মত পুজোর আগে মুসলিম পরিবারের এক শিশুকন্যার খোঁজ শুরু করি৷ সমস্যা আরও ছিল, মুসলিম কন্যা হলেই হবে না৷ তার বয়স হতে হবে চার৷ তাছাড়া মুসলিম পরিবার কি রাজি হবে?’

হাল ছাড়তে নারাজ তমালবাবু, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেন৷ অবশেষে উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটির বাসিন্দা মহম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার৷ তাকে বিষয়টি বলতেই তিনি জানান, তার চার বছরের এক ভাগ্নি রয়েছে৷ তাকেই কুমারী রূপে পুজো করতে পারেন৷ যদিও ফতেমার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আগ্রায়।
তমাল দত্ত আরও জানান, প্রথম বছর থেকেই অষ্টমীতে কুমারী পুজো শুরু করেছেন৷ সেই বছর ব্রাহ্মণ পরিবারের শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়েছিল৷ পরে তারা মত বদলান৷ একই সম্প্রদায়ের শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না তাঁরা৷ তমাল দত্তের মা রমা দত্ত ও স্ত্রী মৌসুমীর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন, তাদের পুজোয় কুমারী নির্বাচনে জাতপাতের ভেদাভেদ রাখতে চাননা৷ সেই মত ২০১৪ সালে অব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, পরের বছর ডোম পরিবারের শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়৷ আর এ বছর মুসলিম পরিবারের চার বছরের ফতেমাকে এনে নজির গড়ল দত্ত পরিবার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.