‘ বড়ো সমস্যা গঙ্গা ভাঙ্গন, এখনই ভাগ হচ্ছে না মুর্শিদাবাদ জেলা,’ রবীন্দ্র সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

Spread the love

‘ বড়ো সমস্যা গঙ্গা ভাঙ্গন, এখনই ভাগ হচ্ছে না মুর্শিদাবাদ জেলা,’ রবীন্দ্র সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

 

জৈদুল সেখ ,বহরমপুর :-    মুর্শিদাবাদ জেলায় বুধবার প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ মুর্শিদাবাদ জেলা সদর বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে একিদিনে বহরমপুর মুর্শিদাবাদ জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এখনই ভাগ হচ্ছে না মুর্শিদাবাদ জেলা। মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগের জল্পনায় ইতি টেনে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠনের পর মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুর্শিদাবাদ জেলায়। বুধবার রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠকে চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষে বলা হয়.. “মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর এবং জিয়াগঞ্জকে নিয়ে আলাদা একটা ডেভলপমেন্ট অথরিটি কি করা যায়?”

এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা বড়ো জেলা এটা নিয়ে আমরা পরে ভাববো কিন্তু বড়ো জেলাকেও অনেক জায়গাতেই আমরা ৫ টা নতুন জেলা তৈরী করেছি, যখন সুযোগ আসবে ভাববো। পাশাপাশি আরও জানান, এখন রাজ্য সরকারের নতুন জেলা করার মতো পর্যাপ্ত অফিসার নেই। একটা জেলা তৈরী করতে গেলে অনেক অফিসার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, “যখন নতুন অফিসার পাবো পর্যাপ্ত তখন নতুন জেলা, নতুন সাবডিভিশন এর কথা ভাববো।”

প্রশাসনিক বৈঠকের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিম তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, জেলার বড়ো সমস্যা হচ্ছে ভাঙন। ভাঙন রোধ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেন তিনি। ভাঙন নিয়ে আরও বলেন, রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার ভুক্ত হলে এই সমস্যা থাকত না।

বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠকে কান্দি মহকুমাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। কান্দি মাষ্টার প্লান রাজ্য সরকারের দেওয়া গুরুত্ব পূর্ণ প্রজেক্ট। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কান্দির বিডিও নীলাঞ্জন মণ্ডলকে বলেন, “কান্দি মাষ্টার প্লানটা জান তো ভাই”। কান্দি থানার আইসি সুভাষ চন্দ্র উদ্যেশ্যে বলেন, “কান্দি থানা এখন খুব ভালো”। তারপর মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে বেশি রেশম উৎপাদন হয় খড়গ্রাম এবং নবগ্রামে, এই নিয়ে খড়গ্রামের বিধায়ক আশিষ মার্জিত রেশম শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বড়ঞায় বিধায়ক বড়ঞা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার আবেদন করেন।

বিড়ি শিল্প নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনের। এ বিষয়ে বিধায়ক বলেন, বিড়ি শিল্প মুর্শিদাবাদে প্রথম স্থানে কিন্তু কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন আইন করে দিয়ে বিড়ি শিল্পকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। বলেন, বিড়ি শিল্পকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছি। আরও অভিযোগ করে বলেন পাট শিল্পের জন্য লোন দিচ্ছে না ব্যাংক। এই বিষয়ে ফান্ড দিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য স্পেশাল হাসপাতাল তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ৪১টি প্রজেক্ট, যার অর্থ মূল্য ৪৮৪ কোটি টাকা। মোট ৩৬টি জনমুখি প্রকল্পে ব্যয় করে সেই সমস্ত প্রকল্পের শুভ শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সহ একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। বহরমপুর এর বৈঠক থেকে ঘোষণা করেন মুরগি, ডিম এবার থেকে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ও মুর্শিদাবাদবাসী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবে। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলাতে প্রত্যেক মহকুমাতে কর্ম সংস্থান লক্ষ্য নিয়ে মুর্শিদাবাদ শিল্কের উপর জোর দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারী যে কোন সময় চাকরি চলে যাচ্ছে তাই নিজেরা কর্মসংস্থান তৈরি করুন।

চেম্বার অফ কর্মাস থেকে মুখ্যমন্ত্রী কাছে আবেদন করা হয়, নসিপুর সেতু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ২০১৮ সাল থেকে কাজ বাধা দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। রেল কিছু করবে না, ৪০টি পরিবারকে যাতে সাহায্য করে ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় তার জন্য জেলা শাসককে নির্দেশ দেওয়া হয় এদিন।

হলদিয়া খিদিরপুর ছোট ছোট পোর্ট করে জলপথ ব্যবহার করার জন্য আবেদন করেন। টেকনিক্যাল সেফটি সিকিউরিটি করার জন্য নির্দেশ দেন এবং সি এস এ কাছে বলা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত। লালগোলা সীমান্তে বর্ডার খুলে দেওয়া জন্য আবেদন করার করা হয়। ৩৪নং জাতীয় সড়ক কাজ থমকে আছে, তবে বাইপাস কাজ শুরু করেছে। জাতীয় সড়ক উপর যানজট নিয়ন্ত্রণে গাড়ি ক্লিয়ার করার জন্য আবেদন করেন। নেতার জন্য কোন গাড়ি যেন আটকে না থাকে তার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি জেলাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন যে, মুর্শিদাবাদ জেলাতে আমের জোগান রাখতে ফুড প্রসেসিং ইউনিট করা হবে। আগামী দিনে জায়গা দেওয়া জন্য জেলা শাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি শিল্পের কোন ভবিষ্যত নেই। বিভিন্ন পার্ক তৈরি করা হলেও সেখানে কাজে যাচ্ছেন না। কিন্তু সেখানে কেও জমি কিনেছেন না বলে বলা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার দুগ্ধ চাষীর সাথে যুক্ত চাষীরা। বর্তমানে ৮০ হাজার লিটার নেওয়া হয় ভবিষ্যৎ দেড় লক্ষ টার্গেট নেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলাতে রাজশাহী সিল্ক বানানোর জন্য আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ জেলাতে ২০০কোটি টাকা পেয়াজ ষ্টোরেজ করা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। মুর্শিদাবাদ জেলাতে একটি জুট ফ্যাক্টরি করা হবে পাশাপাশি জেলার ডোকরা শিল্প অবক্ষয় নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন ঐতিহ্যবাহী ডোকরা শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে ডোকরা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলাতে সুস্বাস্থ্য তৈরি করতে হবে সেই কারণে ৫৪০ টি নতুন করে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা করলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি খরগ্রাম ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায় রেশম শিল্প করা হয়, সেই শিল্পের উন্নয়নে জোর দিতে বলেন এবং গঙ্গার ধারে বাড়ি বন্ধ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন মুর্শিদাবাদ জেলাতে কর্মসংস্থান যোগাতে আইটিআই-এর মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে জেলাশাসককে একাধিক উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.