মুসলমানদের ঘৃণা করেন বাবুল: কবীর সুমন

Spread the love

কবীর সুমন:
অয়ন বাংলা:- গতকাল যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা যা করেছে বেশ করেছে, ভালো করেছে।
আমি তো সবটা দেখলাম। ভিডিওগুলো দেখলাম, গতকালকের উত্তেজনা নিয়ে কে কী বলছে… প্রত্যেকের মত ও বিবরণও পড়লাম। একাধিক নিউজ রিপোর্ট দেখলাম। এবং সবটা দেখে আমি কিন্তু বিস্মিত। একজন মানুষ যিনি বার বার করে বলে চলেছেন—আই অ্যাম আ মিনিস্টার, আই অ্যাম আ মিনিস্টার… তিনি কী করে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এমন নিম্নরুচির আচরণ করতে পারেন! মনে রাখতে হবে, একজন মিনিস্টার কিন্তু রাজা-গজা নন, একজন মিনিস্টার হলেন একজন জনপ্রতিনিধি। বাবুল সুপ্রিয় একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ, উনি জনতার দ্বারা নির্বাচিত ভারত সরকারের একজন সেবক। এর বেশি তো নন! অতএব, যে মুহূর্তে আপনি একজন মিনিস্টার, জনতার নির্বাচিত প্রতিনিধি, সেই মুহূর্ত থেকে কিন্তু আপনি
শুধু একটি দলের লোকের মতো আচরণ করতে পারেন না। একজন মিনিস্টার কিন্তু শুধুমাত্র বিজেপির মিনিস্টার হতে পারেন না। এই যেমন নিজের কথা বলতে পারি। অনেকে আমার হাতেপায় ধরায় তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, আমি কিন্তু কেবল তৃণমূল কংগ্রেস দলটার প্রতিনিধি ছিলাম না। বরং তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জেতা ভারতীয় জনগনের প্রতিনিধি হয়েছিলাম। সেভাবেই কাজ করেছি।
অনেকেই জানেন না, এটা বলা দরকার, যখন এমপি হই আমার এলাকায় ভীষণ জলাভাব ছিল। তা ছিল মূলত যাদবপুর লোকসভার সেইসব অঞ্চলে যেখানে সিপিআইএম শক্তিশালি। আমি কিন্তু সেখানে কাজ করেছি। জলাভাব দূর করেছি। অর্থাৎ, আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রথম কাজ শুরু করি ‘সিপিআইএম এলাকায়’। অনেকে অনেক বিষয়ে গালমন্দ করে থাকেন আমায়, এই বিষয়ে কেউ কিন্তু টু শব্দটি করেননি! সে সময় দলের ছেলেদের বলেছিলাম, কেউ তৃণমূলের ফ্ল্যাগ তুলবে না। কারণ, এটা কেবলই দলের কাজ না, জনগনের কাজ। আর এই যে শ্রী বাবুল সুপ্রিয় মহাশয়। যিনি গতকাল যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিচ্ছিরি আচরণ করলেন, তিনি মিনিস্টার হয়েছেন বলে মাথা কিনে নিয়েছেন?
প্রসঙ্গত বলি, বাবুল আমার নামটা পর্যন্ত মুখে আনেন না, যেহেতু আমি মুসলমান। বাংলার মানুষ জেনে রাখুক, বাবুল সুপ্রিয় নামের এই মানুষটি মুসলমানদের ঘৃণা করেন। মাঝে সোশ্যাল মিডিয়াতে গায়ে পড়ে আমার কুৎসা করেছিলেন। কেন? যেহেতু আমি বিজেপি বিরোধী। হ্যাঁ আমি বিজেপি বিরোধী। আমি চাই বিজেপি ধ্বংস হোক। আমি চাই ভারতবর্ষে সেকুলার শাসক আসুক। অনেকেই জানেন না, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপমানজনক ভাবে আমার নাম নিয়ে ঠাট্টা করেন বাবুল। লেখেন, কী যেন একটা নাম… কবির না কী…! এই ব্যক্তিই তো এভাবে অহঙ্কারে বার বার বলতে পারেন ‘আই অ্যাম আ মিনিস্টার, আই অ্যাম আ মিনিস্টার’। সো হোয়াট? আমরা তো দেখলাম, উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যের সঙ্গে কী ভাষায় কথা বলছেন! সভ্যতার নামগন্ধ নেই! প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে একজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে হয় তা কি বাবুল বাব-মা’র কাছ থেকে শেখেননি?
আমি অবাক হয়েছি দেখে যে ওই মিনিস্টারকে উদ্ধার করতে রাজ্যপাল অবধি এসে পড়লেন! রাজ্যপাল উদ্ধার করতে আসবেন? কিছুই তো তেমন হয়নি! আমি তো বলব, যাদবপুরের আজকের প্রজন্ম যথেষ্ট ‘ভালো’। আমি যে আমলে যাদবপুর থেকে পাশ করেছি, সেটা ১৯৬৯ সাল। ওই আমলে ওঁর মতো লোকদের আমরা অন্যভাবে ‘ট্রিট’ করতাম। এখনকার এরা তো অনেক শান্ত। সুস্থভাবে স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমাদের আমলে আমরা স্লোগান দিতাম না, অন্যরকম ‘কাজ’ করতাম! সেই আমল হলে বাবুল বেরোতে পারত না ইউনিভার্সিটি থেকে। আমি আশ্চর্য হয়েছি দেখে যে ভারত সরকারের একজন মন্ত্রী, একজন এমপি এমন নোংরা ভাষায় কথা বলতে পারে! একজন ছাত্রীকে বলছেন ‘ফাক ইউ’, সেটা রেকর্ডও হয়ে যাচ্ছে!
শুনলাম সুজন চক্রবর্তীর মতো বাম নেতারা নাকি, বাবুলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেমেয়েরা যা করেছে তার নিন্দা করছেন। জানি না ওনারা কেন এমন বলছেন! কীসের নিন্দে? ছেলেমেয়েরা কিছুই করেনি! যে বার বার বলে চলে আমি মিনিস্টার, আমি মিনিস্টার…! আরে মশাই, উনি কি ওখানে মিনিস্টার হিসেবে গিয়েছিলেন? যাননি, গেছিলেন গায়ক হিসেবে। উনি মন্ত্রী হিসেবে জাতীয় কার্যক্রমে যাননি, সাংসদের ট্যুরও ছিল না। গায়ক হিসেবে গান গাইতে গিয়েছিলেন বলেই তো জানলাম। এরপর যা যা হবার তাই হয়েছে! উনি এবং ওনার দল যা করে চলেছে, মানুষ খুন করছে ওরা, ছেলেমেয়েরা তো মানুষ খুন করেনি! তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। বলেছে, ‘ফিরে যাও’। এই কথাটা বলতে পারবে না? সুজনবাবুরা যদি এতে বিরক্ত হন তাহলে কিচ্ছু বলার নেই।
যদি এটা তৃণমূল করে থাকে, আমি বলব বেশ করেছে। যদি এটা সিপিআইএমএল করে থাকে, আমি বলব বেশ করেছে। যে করেছে যা করেছে বেশ করেছে। হ্যাঁ, আমি বলছি তো। আর একজন সহনাগরিক হিসেবে সুজনবাবুদের বলব, গতকালকের ঘটনার খুঁত না ধরে নিজেরা ৭.৫%-এ যে নেমে এসেছেন, সেটা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
মোদ্দা কথা, আমি যাদবপুরের ছেলেমেয়েদের পক্ষে।

(সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুলিখন: কিশোর ঘোষ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.