ওয়েব ডেস্ক :- মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে পাশ আন্দোলনকারী বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পুলিশ তুলে নিয়ে গেল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে। গতকাল ময়ূখ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আজকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অবিলম্বে আপডেট ভ্যাকান্সি তে নিয়োগের দাবীতে প্রতিবাদ করার কথা ছিল। বেলা ২ টো নাগাদ আন্দোলনকারীদের একটা অংশ জমায়েত হতেই পুলিশ এসে তাদের হেনস্থা করে এবং তুলে নিয়ে যায় লালবাজার থানা। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে উত্তীর্ণ অথচ তারা বঞ্চিত। দীর্ঘদিন ধরে তারা কলকাতার রাজপথে মিছিল মিটিং অনশন করে আসছেন। এবছর মে মাস জুড়ে চলছে দফায় দফায় আন্দোলন।
মূলত ২০১৩ সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয় সেই সময় মোট শূন্যপদ ছিল ৩১৮৩ এবং গেজেটে উল্লেখ ছিল, লিখিত পরীক্ষার আগের দিন (০৫/০৯/২০১৬) পর্যন্ত ঘোষিত শূন্যপদের সাথে আপডেট ভ্যাকান্সি যোগ হবে। কিন্তু ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৮ সালে যখন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তখন পূর্ব ঘোষিত ৩১৮৩ র মধ্যে ১৯০০ জন কে রেকোমেন্ডেড করা হয়। মাদ্রাসা গুলোতে নিয়োগ হয় ১৫০০ এর মত।
২০১৩ সালের ১৫০০ শূন্যপদ অর্থাৎ অর্ধেক সীট পূর্ণ করেনি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। গেজেট রুলস অনুযায়ী, শূন্যপদ বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও বিজ্ঞপ্তির ঘোষিত শূন্যপদকে কমিশয়ে দেয়। এমনকি কোনো প্যানেল প্রকাশ না করে কিছু জন কে নিয়োগ দিয়ে দেয়। গেজেট রুলস ২৩ অনুযায়ী ডি আই অফিস কমিশনের ওয়েবসাইট, বোর্ডে সেই প্যানেল প্রকাশ করার কথা বলা থাকলেও সেই প্যানেল প্রকাশ করেনি। শূন্যপদ কমানো ও দূর্নীতি কে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যই প্যানেল প্রকাশ করেনি দূর্নীতির আঁতুড়ঘর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন।
চাকরিপ্রার্থীরা আর টি আই করলেও সঠিক রিপোর্ট অদ্যাবধি কাউকে দেওয়া হয়নি। একজনের আর টি আই দেওয়ার পর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দূর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় আর টি আই দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আরও কিছু জনের আর টি আই দিলে সেখানে ও Academic Evaluation গেজেট রুলস ২০১০ অনুযায়ী কারোর মিলে না বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম। এই দূর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় কমিশন আর টি আই দেওয়া বন্ধ করে দেয়।।
যাদের Academic বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা কমিশনে যোগাযোগ করলে কিছুজনের academic কমিয়ে দেয়।। কমিশনে প্রশ্ন করা হলে, তারা উত্তরে বলেন, আমরা গেজেট রুলস ২০১০ অনুযায়ী প্যানেল তৈরি করিনি। তাহলে তো ২০১৩ সালের বিজ্ঞপ্তির যে কজন কে নিয়োগ করেছে সেই নিয়োগ ও ভুয়ো পুরো প্যানেল ভুয়ো। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাশ চাকরপ্রার্থী মঞ্চ এর দাবী তাহলে সেই ভুয়ো তালিকা বাতিল করতে হবে।। এই দূর্নীতি যুক্ত প্যানেল বাতিল করতে হবে।।
সর্বোপরি আপনারা অবগত আছেন যে, হাওড়ার পাঁচপাড়া হাই মাদ্রাসায় দুজন ভুয়ো শিক্ষক-শিক্ষিকা হাতে নাতে ধরা পড়েছিলেন। তাদের রেকোমেন্ডেড পেপারে কমিশনের স্বাক্ষর ছিল। স্থানীয় ডি আই প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছিলেন, কিন্তু কমিশন চাপ দিয়ে তদন্ত বন্ধ করে দেন।
২০১৮ সাল থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যচ্ছেন। কখনো ধর্মতলা, কখনো হাজরা মোড়ে কিংবা বিকাশ ভবন চত্বরে। কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি মিলেছে কখনো মিলেছে লাঠিপেটা। সুপ্রিমকোর্ট এর নির্দেশে অনধিক ২৬০০ এর উপর নিয়োগ করতে হবে। কমিশন সেই নির্দেশ মান্যতা দেয়নি। হাইকোর্ট বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের জন্য কনসিডারেশন অর্ডার দিলেও কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রৌফ সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘আমি চাকরি দিব না, যা করার করে নিন।’
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের দাবী, এই দূর্নীতি দূর করতে নম্বর সহ গেজেট রুলস ২৩ অনুযায়ী প্যানেল প্রকাশ করতে হবে। ২০১৩ সালের যে ১৫০০ শূন্যপদ এখনো পড়ে রয়েছে সেই শূন্যপদে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সেখানে নিয়োগ করতে হবে। এস এস সি তে দফায় দফায় নিয়োগ করে আপডেট ভ্যাকান্সি তে, আবার কিছু আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সরকার মানবিকতা দেখিয়ে ভ্যাকান্সি বৃদ্ধি করে নিয়োগ করতে যাচ্ছে, অথচ মাদ্রাসায় ভ্যাকান্সি পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন নিয়োগ নেই। প্রায় ১০০০০ হাজার ভ্যাকান্সি। ঘোষিত সীটই পূরণ হল না কেন? আমাদের অবিলম্বে আপডেট ভ্যাকান্সিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, নতুবা আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে। জীবন মরণ সংগ্রামে আমরা আমাদের আহুতি দিব – বলে জানালেন মঞ্চের সভাপতি মনিরুল ইসলাম।