বিজেপি–র ক্যা নিয়ে বাংলাকে সতর্ক করছেন অসমের ভুক্তভোগী বাঙালিরা
তরুণ চক্রবর্তী :-
এক বছর পার হয়ে গেলেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ— ক্যা) বলবত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিনিয়ম এখনও প্রণয়ন করেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। অথচ অসমের পর এবার পশ্চিমবঙ্গে সিএএ (ক্যা)–কে ভোটের হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় মতুয়া ভোট টানার লক্ষ্যে ঘোষণা করেছেন, আগামী জানুয়ারি থেকেই বাংলায় ক্যা চালু করে মতুয়াদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অসমের ভুক্তভোগী বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন বাংলার বাঙালিদের সতর্ক করেছে, ক্যা নিয়ে বিজেপি বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অথচ অসমে তাঁরা রাজনৈতিক কারণেই এখন বিষয়টি নিয়ে নীরব।
সম্প্রতি অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘ক্যা এখন আর কোনও ইস্যুই নয়।’ এরপরেই ক্যা নিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি–র বিরুদ্ধে। ক্যা নিয়ে মতুয়াদের মন জয়ে বাংলার বিজেপি নেতারা প্রচারে নামলেও অসমের বিজেপি কিন্তু বেশ সতর্ক। বরাকের হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে ক্যা নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করলেও অসমিয়া–অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ভোটের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত বছর এই সময় বিভিন্ন অসমিয়া সংগঠনের ক্যা–বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ততই বিজেপি–ও যেমন ক্যা নিয়ে পিছিয়েছে, তেমনই উত্তাল আন্দোলনও থিতিয়ে গিয়েছে। আগামী ভোটে অসমে বিজেপি ক্যা নিয়ে নীরব থাকারই পক্ষে।
তবে বাংলায় ক্যা–কে তারা অন্যতম প্রধান হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে বলেই মনে করেন অসমের ভুক্তভোগী বাঙালিরা। বিশেষ করে প্রায় দেড় কোটি মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখেই বাংলায় বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি (ক্যা)–কে খুঁচিয়ে তুলবে। কারণ এই বিরাট সংখ্যক মতুয়ারা রাজ্যের, বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ার সিংহভাগ আসনে জয়–পরাজয় নির্ধারণ করেন। ওপার বাংলা থেকে আসা এই মানুষরা বছরের পর বছর লোকসভা থেকে বিধানসভা, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় ভোট দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাগ্য নির্ধারণ করলেও তাঁরা একটা কাগজ চান। বিজেপি সেই সুযোগটাই নিতে চায়। ক্যা–কে হাতিয়ার করে তাঁদের হাতে নাগরিকত্বের কাগজ তুলে দেওয়া হবে, এই আশ্বাসই দিয়ে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
অসম কংগ্রেসের মতে, ক্যা আসলে বিজেপি–র ‘নির্বাচনী ললিপপ’। বরাকের বাঙালিকে তারা এটা খাইয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কারণ তাতে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমিয়া ভোটে টান পড়বে! অসমের বাঙালিদের বড় অংশ এখন ঠেকে শিখেছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ক্যা বাতিল করার দাবিতে ১৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীদের অধিকাংশের দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান ভারতের সংবিধানের মূল ভাবধারার বিরোধী। বিতর্ক দেখা দিতে পারে ভেবেই ধীরে চলো নীতি নিয়েছে কেন্দ্র। সে–কারণেই রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার পরেও প্রায় এক বছর কাটতে চলল, অথচ তা বলবত করার বিধিনিয়ম তৈরিই হয়নি।
গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরির মতে, আইন পাশ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই বিধিনিয়ম তৈরি করতে হয়। তা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার শুধু সময়ই নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অসমে বিজেপি–র মুখপাত্র জয়ন্ত মল্লবরুয়া বলেন, ‘ক্যা তো আমরা পাশ করেছি। তবে অসমে এর তেমন প্রয়োজন নেই।’ অসম নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির সভাপতি তথা বরাকের শিলচর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘বাঙালির মধ্যে বিভেদ ঘটাতেই এ সব করা হচ্ছে। বাঙালি কখনও হিন্দু বা মুসলিম হয় না। বাঙালি বাঙালিই। মূর্খেরা এই সত্যটা জানে না।’ তাঁর অভিমত, ‘অন্ধ বাঙালি–বিদ্বেষ থেকেই বিজেপি বাঙালির সর্বনাশ করছে।’ বাংলার মানুষকে তিনি বিজেপি–র ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সৌজন্য :- আজকাল পত্রিকা
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/tea.jpeg)
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/Ads.jpeg)