এড্রিনাল ফ্যাটিগ বা দূর্বলতার গূঢ় রহস্য :- লিখেছেন—ডাঃ ইয়ার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদন .অয়ন বাংলা:- আপনি স্টুডেন্ট?
পড়াশুনাতে মনযোগ দিতেই পারছেন না! সমস্ত কাজে অলসতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করছেন! মনের জোর ও ইচ্ছা থাকলেও আপনার শরীর সাই দিচ্ছেনা৷ আপনি আপনার সতেজতাই কুলাতে পারছেন না!
আপনি অল্প বয়সেই মাথার চুল হারিয়ে টাক হয়ে যাচ্ছেন ? আপনি যৌন-সক্ষমতায় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন? আপনি বিবাহিতা মহিলা—যৌন মিলনের আকাঙ্খা একদমই নাই? আপনার সব রিপোর্ট ঠিক থাকলেও বাচ্চা আসছেনা?
আপনি যে কোন কাজের আগেই হেরে যাচ্ছেন? শারিরীক শক্তিমত্তা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে? আপনি সর্বদা ক্লান্তি আর অবসাদে ভূগছেন? আপনি দিনের কোন এক ক্ষণে প্রচন্ড ভেঙে পড়ছেন বা আপনাকে কিছুই ভাল লাগছেনা?
আপনি বিছানা থেকে উঠে বসতেও পারছেন না? এমন কি দুটো কথা বলতেও শক্তি পাচ্ছেন না?
সর্ব দেহ ক্লিষ্ট? ব্যাথা বেদনায় আবিষ্ট?
তাহলে, আপনি নিশ্চিত এড্রিনালিন গ্লান্ডের পরিপূর্ণ সক্ষমতার অভাবে প্রভাবিত সর্বশান্ত ক্লান্ত মানুষটি!
আপনি ADRENAL FATIGUE সমস্যাতে জর্জরিত৷
এই এড্রিনাল ফ্যাটিগ বা দূর্বলতা মহামারীর মত প্রায় ৮০% লোকের জীবনে এক বা ততোধিকবার আসে—বিশেষকরে বর্তমান কালে ব্যস্ততাময় জীবন-যাপনে৷ এটা সম্পর্কে অধিকাংশ লোকের খুব একটা ধারণা নেই৷ এমন কি মেইন স্ট্রিম মেডিক্যাল কমিউনিটিতেও এই সমস্যাটি উপক্ষিত৷ অনেক ক্ষেত্রে, এই সমস্যাটিকে মানসিক বা সাইকিয়াট্রিক সমস্যা বলে অপ-বিবেচনা করা হয়ে থাকে৷ কিছু কিছু চিকিৎসক এই সমস্যাটি নিয়ে সচেতন হলেও, এর মূল কারণ কী ? কেনই বা এই রকম সমস্যা হয়? কীই বা এর সুরাহা বা সঠিক নিরাময় ? সেটা পরিপূর্ণ বুঝে উঠতে পারেন না৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই সমস্যার উপর গবেষনা বা স্টাডি নগন্য৷ ফলে, আমি আমার বিভিন্ন স্ট্রিমের মেডিক্যাল স্টাডি ও সর্বোপরি ইসলামি চিকিৎসা বিদ্যার উপর দৃঢ় অধ্যাপনার মাধ্যমে যথাসাধ্য এড্রিনাল ফ্যাটিগ সম্পর্কে সত্য ও সঠিক ধারণাটা প্রস্ফূটিত করার চেষ্টা করছি৷
যদি আপনার এড্রিনাল গ্রন্থিদ্বয় অনিয়মিত,বিশৃঙ্খলভাবে কাজ করে , তবে নিচের লক্ষণসমূহ গুলির এক বা একাধিক আপনি অনুভব করবেন:—
১)শারিরীক দূর্বলতা,২)এনার্জির অভাব,৩)মননিবেশের অভাব,৪)সহজেই কনফিউজড হয়ে যাওয়া,৫)স্মৃতি দূর্বল হওয়া বা সহজেই ভূলে যাওয়া,৬)যে সব কাজ আগে আপনি সহজেই করতেন,অথচ এখন যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে বা কষ্ট হচ্ছে,৭)গলার স্বর স্থূল হয়ে যাওয়া,৮)বদহজম,৯)কষ্ঠ্যকাঠিন্য,১০)অবসাদ,১১)ঘুম না আসা,১২) ঘুম থেকে উঠেও মনে হচ্ছে বিশ্রাম ঠিক হয় নি! ১৩)ভাল লাগছেনা বলে সারাদিন বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া বা ল্যাদ খাওয়া , ১৪) Crashing বা খুবই ক্লান্তিময় মন ও শরীরে বিষন্নতায় আচ্ছন্ন থাকা দিনের সকালে বা বিকালে বা দূপূরে বা রাতে৷ ১৫) বিকালে চনমনে আবার রাতে অবসন্ন বা বিকালে অবসন্ন আবার রাতে চনমনে অর্থাৎ দিনের সময়ের সাথে সাথে শরীর ও মনের সতেজতার বিশাল রকম হেরফের! রাতে কান্তিময় শরীর থাকলেও ঘুম আসতে না চাওয়া৷ ১৬) বড় কোন দূর্ঘটনা বা প্রসব পরবর্তীকালে জননীদের প্রচন্ডরকম শারিরীক দূর্বলতা প্রভৃতি৷
উপরের যে কোন একটি থাকলে বুঝতে হবে এড্রিনাল গ্রন্থি নিস্তেজ হতে শুরু করছে!!!
*** নিঃশেষিত বা নিস্তেজ এড্রিনাল গ্লান্ডের ক্ষতিকর প্রভাব দেহের অন্যান্য অঙ্গেও পড়বেই৷ যেমন—অগ্নাশয় গ্রন্থি,হার্ট,লিভার,মস্তিষ্ক, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম৷ যাইহোক, এই ফ্যাটিগ যদি আরও আরও গভীর ও চূড়ান্ত পর্যায়ের হয় তবে, নিউরোলোজিক্যাল ফ্যাটিগও চলে আসবে৷ নিউরোলজিক্যাল ফ্যাটিগ হয় যখন সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বিভিন্ন ভাইরাস যেমন—EBV,Shingles .দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ইনফ্লামেশন হয় এবং ফুলে যায়৷ নিউরোলজিক্যাল ফ্যাটিগে নার্ভের কাজকর্ম ব্যাঘাত ঘটে৷ একটু কাজ করলে দেহে বা হাত পায়ে যন্ত্রনা, অসারতা, দূর্বলতা চলে আসে৷
ফ্যাটিগ প্রচন্ডাকারে দেখা দিলে একজন মানুষ শয্যাশায়ী , অকর্মন্য, অপারগ ও পঙ্গুর মত হয়ে যায়৷
***এড্রিনাল ফ্যাটিগের কারণ কী?
এড্রিনাল গ্লান্ড আমাদের দুই কিডনির উপরে ছোট ছোট আকারের দুটি লাম্পের মত অর্গান৷ এন্ডোক্রিন সিস্টেমের অন্যতম এই দুটি গ্লান্ড থেকে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় , অত্যাবশ্যকীয় হরমোন তৈরী হয়—নাম এড্রিনালিন ও কর্টিসল৷ এছাড়াও, এখান থেকে মিনারেলোকর্টিকোস্টেরয়েড, সক্স স্টেরয়েড নিঃসৃত হয় ৷ মহিলা প্রজনন হরমোনগুলিও পর্যাপ্ত পরিমাণে এই গ্লান্ড থেকে তৈরী হয়৷ ইস্ট্রোজেন,প্রজেস্টেরন,টেস্টেস্টেরন প্রভৃতি৷ অর্থাৎ, এড্রিনাল গ্লান্ডের সূস্থতা ও সতেজতা, কর্মক্ষমতা ও সুনির্দিষ্ট ছন্দ সরাসরি মহিলাদের যৌন-মিলনের অভিপ্রায় ও বাসনা , এবং গর্ভে সন্তান ধারনের উপর প্রভাব ফেলে৷
সাধারন যুক্তি ও বিশ্বাস অনুযায়ী , মনে হতে পারে এড্রিনাল গ্লান্ড হরমোন তৈরী করা বন্ধ করে দেয়, যখন এটি ফ্যাটিগ বা শ্রান্ত হয়ে পড়ে৷ কিন্তূ, এটা একটা ভূল ধারণা৷ প্রকৃতপক্ষে, এড্রিনাল গ্লান্ডের কার্যকারিতা ও হরমোন তৈরী হওয়া—
Emotional Stress
( মানসিক চাপ,উত্তেজনা,আবেগ,আতঙ্ক,উৎকন্ঠা,ভালবাসা,
নিরাপত্তা, ভয়, রাগ, হিংসা, অহঙ্কার, ভরসা, দৃঢ়তা, বিশ্বাস প্রভৃতি) ,
Environmental factors( পরিবেশের আবহাওয়া, বিপদ আপদ, খাদ্য,পাণীয়, কেমিক্যালস, রেডিয়েশন, প্রকৃতির দৃশ্য, প্রভৃতি) এবং
দেহে বিদ্যমান বিভিন্ন অসুখের ভিন্নতা ও ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে৷ এই রকম ভেরিয়াবিলিটি বা ভিন্নতার জন্য এড্রিনাল গ্লান্ড স্যুইং করে খুব ঘন ঘন৷ হয় প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হতে হয় নতুবা অতি অল্প পরিমাণে৷ এই রকম ফ্লাকচুয়েটিং বা অতি দ্রুত ব্যাপক হেরফেরে অতিকম-অতিবেশী স্ট্রেসে এড্রিনাল গ্লান্ড সত্যিকারের ক্লান্ত বা ফ্যাটিগ হয়ে পড়ে৷
অল্প বয়স থেকেই ছেলে মেয়েদের জীবনে ইমোশন যত বেশী হবে, সেই ছেলে মেয়ে কম বয়সেই এই ফ্যাটিগে আক্রান্ত হবে৷ অবৈধ প্রেম প্রীতি, যৌনাচার, সবরকম অসামাজিক অপরাধগুলি মানুষের এই গ্লান্ডকে ভয়ঙ্করভাবে নেগেটিভলি ক্ষতি করে৷ ফলে, জীবনের প্রফুল্লতা, প্রসন্নতা,প্রশান্তি, তারা হারিয়ে ফেলে৷
দুটি গ্লান্ডই সমানভাবে অবসন্ন হয়ে পড়েনা৷ বরং একটার থেকে আরেকটা সর্বদা দূর্বল বা স্ট্রং অথবা একটার থেকে আরেকটি বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক এড্রিনাল গ্লান্ডের নিজস্বতা আছে৷ এবং বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ব্লেন্ডের সুনির্দিষ্ট এড্রিনালিন তৈরী করে৷ যেমন ‘—বাম সুপ্রারেনাল গ্লান্ড প্রধানতঃ সেই ব্লেন্ডের নির্দিষ্ট এড্রিনালিন তৈরী করে যখন আমাদের দেহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়৷ রোগটির বিরুদ্ধে দেহকে এডপ্ট ও ক্রাইসিস মেনেজ করতে সহায়তা করে৷ যেমন স্টোমাক ফ্লু বা ফুড পয়জনিং৷
ডান সুপ্রারেনাল গ্লান্ড প্রধানতঃ সেই সকল ব্লেন্ডের এড্রিনালিন সিক্রেসন করে যেগুলি আমাদের বিভিন্ন মানসিক অনুভূতি ম্যানেজ করতে সহায়তা করে৷ যেমন ভালবাসা,নিরাপত্তা,ঘৃনা প্রভৃতি৷
এইরকমই বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক অবস্থার ভিন্নতা ও মাত্রায় আমাদের দেহের হিলিং প্রভাবিত হয় দারুনভাবে৷ আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা,পরোপকার,হিতৈষনা,ত্বাক্বওয়া, ঈমান প্রভৃতি পজিটিভ প্রভাব ফেলে৷ দুঃশ্চিন্তা,দ্বিধা,সংশয়,ভয়,নিরাপত্তাহীনতা,হিংসা,
বিদ্বেষ , বিভিন্ন এক্যুট রোগ বা ক্রনিক রোগ প্রভৃতি নেগেনিভ প্রভাব ফেলে৷ এই বিষয়টা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক৷ এবং এড্রিনালিনের ডান বা বাম সূপ্রারেনাল গ্লান্ড থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন ব্লেন্ডের পরিমাণ , কুয়ালিটি, ও সূক্ষতার উপর নির্ভর করে৷
***স্ট্রেস রেসপন্স:
সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ আমাদের দেহকে এমনভাবে বানিয়েছেন যে,(Innate Intelligence) যখন আমরা শারিরীক বা মানসিক চাপে বা বিপদ-আপদে পতিত হই তখন এড্রিনাল গ্লান্ড জানে কী পরিমাণ ও কী ব্লেন্ডের , কত সময়ের জন্য এড্রিনালিন তৈরী করতে হবে৷ আমরা জীবন-যাপনে যতধরণের যতরকমের প্রবলেম ফেস করি, সবগুলিকে মোকাবিলা করার মানসিক ও শারিরীক যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রদান করে এই হরমোন৷ চ্যালেন্জ মোকাবিলা করা হয়ে গেলে হরমোনটি দ্রুত দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় (Short-lived survival mechanism) ৷ এই হরমোনটি Fight and Flight মোডে কাজ করে৷
এবার, যদি এই স্ট্রেস বা বিপদ-আপদ , মানসিক টানাপোড়েন, নিরাপত্তাহীনতা, উত্তেজনা, রোগ বালা, আতঙ্ক (যেটার জন্য আমাদের দেহ ও মন প্রস্তূত নয়) নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিরাজ করলে এড্রিনাল গ্লান্ড হঠাৎ করে ড্যামেজ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এবং এই সময় এড্রিনাল গ্লান্ড বিশৃঙ্খলভাবে , অস্থিরতাপূর্ণভাবে আচরন করতে শুরু করে৷ আধুনিকতার নামে আমাদের মনে ও দেহে যে সর্বক্ষণের চাপ তৈরী হচ্ছে, তার জন্য আমাদের দেহকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে!
ঘন ঘন বা সর্বক্ষণের শারিরীক বা মানসিক চাপে শুধুমাত্র এড্রিনালিন গ্লান্ড ফ্যাটিগ হয় তাইই নয়; উপরন্তূ, জীবন ধারনের জন্য নিঃশেষিত হরমোনের যে অংশ নিঃসৃত হয় তা শেষপর্যায়ে এসিডিক ও করোসিভ হয়৷ অনেকটা ব্যাটারি অসিডের মত ৷ বিশেষ বিশেষ মহুর্তে, বিশেষ বিশেষ সুযোগ ও পরিবেশে যখন এড্রিনালিন সিক্রেসন হয় তখন সেটা সত্যিকার অর্থে ফাইট ও ফ্লাইট হিসাবে কাজ করে৷ এসব ক্ষেত্রে, দেহ সুষ্ঠুভাবে এড্রিনালিনকে কাজে লাগাতে পারে৷ কিন্তূ, এই এড্রিনালিনই যখন অতি ঘন ঘন বা অনবরত স্ট্রেসে নিঃসৃত হয় তখন এই এড্রিনালিনই ব্রেন,অগ্নাশয়,লিভার ও অন্যান্য অর্গানের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে থাকে৷
*** অভিনব তথ্য: Many Blends of Adrenaline
চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করে যে, এড্রিনালিন গ্লান্ড থেকে এক ধরণের এড্রিনালিন তৈরী হয়৷ কিন্তূ এটা সত্য নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, ৫৬ রকমের এড্রিনালিনের বিভিন্ন ব্লেন্ড তৈরী হয়৷ একেক রকম ব্লেন্ড একেক রকমের মানসিক এমোশন বা আবেগে ,পরিস্থিতিতে, কাজকর্মে তৈরী হয়ে আমাদের দেহকে প্রস্তূত করে৷ উদাহরণ হিসাবে ধরুন, বিভিন্ন গাড়ির ভিন্নতা ও শক্তি অনুযায়ী ইন্জিনের যে তেল বা মোবেল লাগে তার ভিন্নতা আছে৷ একটি বাইকের ইন্জিনের জন্য যে ব্লেন্ডের তেল লাগে, অটো, চারচাকা বা বাস ,প্লেনের ইন্জিনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্লেন্ডের তেল লাগে৷ কী পরিমাণ তেল লাগবে, সেটা নির্ভর করে গাড়িটির কাজের ও গতিপথের ভিন্নতার উপর৷ একটি গাড়ি পাহাড়ের ঢালু রাস্তায় চলতে যে পরিমাণে তেল লাগবে, সমতলে নিশ্চয়ই ভিন্নতা থাকবে৷ অনুরূপভাবেই, আমাদের মন ও দেহ দৈনন্দিন জীবনে কী রকম চ্যালেন্জ বা প্রবলেমের সম্মুখীন হচ্ছে—তার ভিন্নতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ও পরিমাণ এড্রিনালিন তৈরী হয়ে আমাদের মন ও দেহকে উপযুক্ত করে তুলে৷ আমাদের এড্রিনাল গ্লান্ডের স্বতন্ত্র আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতার গুণে জরুরীভিত্তিতে কোন পরিস্থিতিতে কোন সময় ,কী টাইপের কতটা পরিমাণে এড্রিনালিন তৈরী করতে হবে —তা এক অপূর্ব সৃষ্টির মহাজ্ঞান৷ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি!
*** Adrenication বা এড্রানালিন-আসক্তি:
আমরা সকলেই খুবই ভালভাবে পরিচিত যে— ড্রাগ , এলকোহল মাদকাসক্তি আমাদের দেহ , মনন, সমাজ, দেশকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে! কিন্তূ, এটা আমরা এক্বেবারেই জানিনা যে, Addiction বা মাদকাসক্তি প্রকৃতপক্ষে এড্রিনালিন আসক্তি!!!!! এড্রিনালিন নেশাদ্রব্যের তালিকায় সিড্যুউল ১ নং ড্রাগ৷ শত সহস্র বছর আগের যুগে এড্রিনালিনের আসক্তি খুবই কম ছিল৷ কিন্তূ, বর্তমানের দ্রুততার যুগে, অশ্লীলতা, অপরাধ পরিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থায় ৫০% এর অধিক লোক এড্রিনালিনের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত৷
নেশাজাতীয় দ্রব্যের মতই, আমরা যত এড্রিনালিনের উপর নির্ভর করব—ততই এটার প্রতি আমরা আসক্ত হয়ে পড়ব৷ যত সময় গড়াবে, আমাদের আসক্তির পরিতৃপ্তি করতে আরও আরও বেশী ড্রাগ লাগবে৷ আমরা আমাদের জীবনের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকে সুচারুভাবে সুসম্পন্ন করতে করতে এমন সার্বক্ষনিক ব্যস্ততায় ডুবে থাকি যে, এড্রিনালিনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি৷ পরবর্তী একই কাজ করতে আরও বেশী পরিমাণে এড্রিনালিন প্রয়োজন পড়ে৷ যে কোন নেশাজাতীয় দ্রব্যের মূল কাজ হল এড্রিনালিন নিঃসরনে উত্তেজনা তৈরী করা৷ সেই এড্রিনালিন লিভার ও প্যাংক্রিয়াশকে উদ্দীপ্ত করে গ্লুকোজ লেবেল রক্তে বাড়াতে৷ তখন আমরা এনার্জি অনুভব করি৷ রক্তের গ্লুকোজ ড্রপ করলেই ক্রেভিং বা নেশা করার ইচ্ছা বা আসক্তি তৈরী হয়৷ প্রতি ৯০ মিনিট পরপর এই ব্লাড গ্লুকোজ রেণ্জের নিচে ড্রপ করে৷ ফলে, যারা অতি আসক্ত তারা ১.৫—২ ঘন্টার বেশী নেশা না করে থাকতে পারেনা৷ নেশা না করলে, তাদের দেহ মন নিস্তেজ হয়ে পড়ে৷ বাইরের নেশাদার দ্রব্য প্রকৃতপক্ষে দেহের মধ্যে এড্রিনালিনের প্রতি আসক্তি৷ তাই, যে কোন নেশাই লিভার,প্যাংক্রিয়াস,ব্রেন, হার্ট সমস্ত অর্গানে ক্ষতি করবে৷ এড্রিনালিনের ক্ষতিকর প্রভাবে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার, রক্তের চর্বি, কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট প্রভৃতি ধীরে ধীরে জীবনে আগমন করবে৷
****এড্রিনালিন ফ্যাটিগ থেকে চিরমুক্তির পথ****
১) মানসিক চাপ কমানো বা বন্ধ করা:
মনের প্রশান্তির একমাত্র হক্ব বা সত্য উপাস্য আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে আনয়ন করতে হবে৷ জীবনের গতিপথে আগত নানা বাধা-বিপত্তি, দুঃখ-দূর্দশা, উত্তেজনা-উৎকন্ঠা, ভয় ভীতি থেকে একমাত্র সাহায্যকারী ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে মুক্তি ও আশ্রয় চাইতে হবে৷ বিপদ দূরকারী, কঠিনকে আসানকারী, নিরাপত্তাদানকারী হিসাবে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা ও বিশ্বাস করতে হবে৷ ইসলামে নিষিদ্ধ সকল মনের রোগগুলি যেমন হতাশা, নিরাশা, অসন্তুষ্ট চিত্ত, অহঙ্কার, ঘৃনা, বিদ্বেষ, অপবাদ, প্রতারণা, মিথ্যাকথা, কপটতা, কুফরি , শিরকি বর্জন করতে হবে৷
পাশাপাশি, পরিপূর্ণ বিশ্বাস, ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, শ্রদ্ধা, পরোপকারিতা, ভাতৃত্ব, পারস্পরিক সম্পর্কের মজবুতি, প্রভৃতি মনের অনুশীলনগুলি নিয়মিতভাবে ধরে রাখতে হবে৷
২) শারিরীক চাপ কমাতে হবে:
শারিরীক নিপীড়ন, অত্যাচার, প্রহার, দূর্ঘটনা, আঘাত, মাদকাশক্তি, রাতজাগা, হেভি এক্সারসাইজ, প্রভৃতি কমাতে হবে বা বন্ধ করতে হবে৷
৩) ফুড গ্রেজিং টেকনিক(Food Grazing Technique)
এড্রিনালিন গ্লান্ডকে ব্লাডে গ্লুকোজ ড্রপের সাথে সাথে উদ্দীপ্ত হয়ে এড্রিনালিন সিক্রেশন করতে হয়৷ ফলে , অনবরত চাপ থাকছেই৷ গ্লান্ডদুটি বিশ্রামই পাচ্ছেনা যাতে তারা নিজেদের নিস্তেজতা কাটিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সতেজতা পুণঃরুদ্ধার করতে পারে৷ প্রতি ৯০ মিনিট পর পর এই ব্লাড গ্লুকোজের ফ্লাকচুয়েশন হয়৷ তাই, খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ন হল— প্রতি ৯০ মিনিট পরপর রক্তে প্রাকৃতিক গ্লুকোজে এক্সটার্নালি সরবরাহ করা৷ প্রতি ৯০ মিনিট পরপর দুটো ফল ও একটা শব্জী অথবা দুটো শব্জী ও একটা ফলের কম্বিনেশন করে আমাদের খেতে হবে৷
যেমন— ১ পিস খেজুর+১/২পিস আপেল+১/২পিস শশা৷
আপনি আপনার কাছে যা পাওয়া যাবে ফল ও শব্জীর মধ্যে, তাই দিয়েও করতে পারেন৷ যাইহোক, ফুড গ্রেজিংটা অবশ্যই অবশ্যই করুন৷ যাতে নিয়মিত ইন্টারভেলে সোডিয়াম,পটাশিয়াম ও গ্লুকোজ পায়৷
এই টেকনিক যে কোন নেশা ছাড়াতেও দারুনভাবে উপকারী!!!!
৪) এড্রিনাল গ্লান্ডকে রিস্টোর করতে সহায়ক কিছু ফুড সাপ্লেমেন্টস:
জিঙ্কসেঙ্ক, অশ্বগন্ধা, লাইসিন,বি কম্প্লেক্স, বি ১২, অলিওরোপিন প্রভৃতি৷
যে সকল লোকেদের চুলপড়া, সেক্স ড্রাইভ কম প্রভৃতি সমস্যা আছে তাদের জন্যও এগুলি খুবই উপকারী৷
৫) EBV +/_ Shingles থাকলে , Cat’s claw, Lemon Balm ; হেভি মেটালস থাকলে —স্প্রীলুনা,সিলান্ত্রো, ব্লু বেরি, বার্লি গ্রাস প্রভৃতি৷
৬) ডিম,সয়াবিন,ভূট্টা, হাই ফ্যাট যুক্ত খাবার , আর্টিফিসিয়াল ফ্লেভার, আর্টিফিসিয়াল কালার, MSG প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে হবে৷
বিঃ দ্রঃ— বর্ণিত সকল তথ্য ও আর্টিকলটি আমার নিজস্ব গবেষণা৷ এটি জনসাধারণকে সচেতন ও শিক্ষার জন্য পরিবেশিত৷ এটার ভিত্তিতে অদক্ষ বা অডাক্তাররা রোগের চিকিৎসা করার ব্যাপারে আমি দায়ী নই৷ রোগের জন্য অবশ্যই চিন্তাশীল যোগ্য ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন৷ ধন্যবাদ৷