বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় একাধিক নাম
পরিমল কর্মকার ,প্রতিবেদন,(কলকাতা) : ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, অথচ আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ভাসছে একাধিক নাম। তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থীকেই স্থানীয় নেতা-নেত্রী ও কর্মীরা সমর্থন করবেন, এমন কথা দলীয় কর্মীরা মুখে বললেও ভোটের আগেই এই কেন্দ্রে বড়সড় একটা গোষ্ঠী কোন্দলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর রত্না শূর, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শক্তি মণ্ডল, ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তারক সিং, শোভন-পত্নী রত্না চ্যাটার্জী ছাড়াও নাম উঠছে চিত্রতারকা সোহমের। একাধিক নাম ওঠায় গোষ্ঠী সংঘাত অনিবার্য বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই চার জন রাজনীতিবিদেরই নিজ নিজ “লবি” রয়েছে। স্বভাবতই: এই নেতা-নেত্রীদের “লবির” কর্মীরা চাইবেন তাদের নিজেদের পছন্দ মতো নেতা কিংবা নেত্রী “টিকিট” পান। দেখা গেল, বিপরীত “লবির” কোনও নেতা কিংবা নেত্রী টিকিট পেলেন…. সেক্ষেত্রেই চরমে উঠবে তৃণমূলের দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ, এমনটাই আভাস ওই সূত্রের।
আর চিত্রতারকা সোহম ? এক্ষেত্রে অনীহা বেহালার মানুষের। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চিত্র তারকারা জনসেবায় খুব একটা উৎসাহী নয়। এরা নিজেরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে সিনেমা-শুটিং-বিচিত্রানুষ্ঠান, এসব নিয়েই মেতে থাকেন। ইতিপূর্বে দেবশ্রী রায়, দেব, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, নুসরত, মিমি চক্রবর্তীরা মানুষের ভোটে নির্বাচত হলেও তাদের সেভাবে মানুষের পাশে দেখতে পাওয়া যাযনি বলেই সূত্রের খবর। উপরন্তু এইসব চিত্রতারকারা নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন প্রত্যন্ত জেলার শহর ও মফস্বল থেকে। এইসব অঞ্চলে চিত্রতারকাদের দর্শন পাওয়ার জন্য গ্রামীণ মানুষের মধ্যে একটা হিড়িক থাকে। যেটা কলকাতার ক্ষেত্রে একেবারেই প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া বিজেপি’র উত্থানে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে এবার একটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই সাংগঠনিক শক্তি ছাড়া এই কেন্দ্রে জয় পাওয়া তৃনমূলের ক্ষেত্রে খুব একটা সহজসাধ্য কাজ হবেনা। তাই সোহম টিকিট পেলেও তার হয়ে কতজন কর্মী নির্বাচনী ময়দানে নামবেন এনিয়ে সন্দিহান বিভিন্ন মহল।
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের অনেকেরই ধারণা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও সাংগঠনিক দক্ষতায় শীর্ষে থাকা ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর রত্না শূর টিকিট পেলে তার জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গিয়েছে। তাছাড়া এই ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের অপরাজিত কাউন্সিলর তিনি। তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনও অবকাশই নেই। দীর্ঘদিন ধরে দলের যে কোনও কর্মসূচিতে তিনি মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে গিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর।
এবার আসা যাক, তৃণমূলের জেলা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তথা বেহালার ভূমিপুত্র ও বলিষ্ঠ বক্তা শক্তি মণ্ডলের বিষয়ে। প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাকে বেহালার রাজনীতির অঙ্গনে কোনোদিন প্রার্থী করেনি তৃণমূল। অথচ অন্য এক জেলার বাসিন্দা পরশ দত্তকেও বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। শক্তি মণ্ডলকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সেধে সেধে কারোর কাছে টিকিটের প্রত্যাশী আমি নই। নিজেকে তৃণমূলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী বলেই মনে করি। দল মনে করলে টিকিট দেবে। দায়িত্ত্ব পেলে কাজ করবো…..।” বেহালার বহু মানুষই বলছেন, “বৃহত্তর সাংগনিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও শক্তি মণ্ডলকে কার্যত: উপেক্ষাই করেছে দল। বিধানসভা তো দূরের কথা, বেহালায় কোনোদিন তাকে কাউন্সিলরের টিকিটও দেয়নি তৃনমূল। অথচ অস্বচ্ছ ও সংগঠনহীন কিছু নেতারাও এখন এখানকার তৃণমূলের জন প্রতিনিধি।”
তারক সিং-এর কথা বলতে গেলেই বলতে হয়, এক সময় দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর। তারক সিং-এর ঘনিষ্ঠ সূত্রে শোনা যাচ্ছে, তিনিই নাকি টিকিট পাচ্ছেন বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে। অপরদিকে অনেকেরই বলছেন, “বেহালা পূর্ব কেন্দ্রটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা, তাই তারক সিং প্রার্থী হলে বাঙালি সেন্টিমেন্টের ভোট অন্য বাক্সে চলে যেতে পারে….। তবে তারক সিং বেহালা পূর্বে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা একথা তারক সিং-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার কাছে এরকম কোনও খবর নেই। আর আমি নিজের জন্য কাউকে তেল মাখাতে যাবো না… তবে টিকিট পেলে লড়াই করবো।”
বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃনমূল বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক পদ না ছাড়ায় এখনও তিনি এই কেন্দ্রের বিধায়ক রয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি বিজেপি’র হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রেই দাঁড়াচ্ছেন। তাকে টাইট দিতে শোভন-পত্নী রত্নাকেই দাঁড় করাতে পারে তৃণমূল…. এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এব্যাপারে রত্না চ্যাটার্জীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “দল দায়িত্ব দিলে নিশ্চয়ই দায়িত্ব পালন করবো…”
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় যাদের নাম ভাসছে তাদের মধ্যে চারজনই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-নেত্রী। চারজনই টিকিটের দাবিদার। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও বিপরীত “লবির” কেউ টিকিট পেলে গোষ্ঠী সংঘাত অনিবার্য বলেই ধারণা এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।