বেহালায় দিনে-দুপুরে গুলি ! থানাকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিধায়িকা
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : বেহালার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের মুচিপাড়া এলাকায় শনিবার রাতে শুভদীপ নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ির সামনে কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী গুলি চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ রবিবার দুপুরে আবার ওই দুষ্কৃতীরা হানা দেয় বেহালার মুচিপাড়া বাজার এলাকায়। গুলির আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। এমনকি পুলিশের সামনেই গুলি চলে বলে অভিযোগ ওঠে। ওখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নিরীহ মানুষদের উপর চড়াও হয়ে তাদের মারধরও করে দুষ্কৃতীরা…. সরাসরি অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা অর্ণব ব্যানার্জীর নামে। তারই নেতৃত্বে প্রলয়, আনন্দ, ভাস্কর সেন, লাল্টু ঘোষেরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান তৃনমূলের জেলা সম্পাদক সোমনাথ ব্যানার্জী (বাবন)।তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি রূপক গাঙ্গুলীও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত: ঘটনার পর রবিবার ও সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার খবর সম্প্রচার এবং প্রকাশ হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। গুলি চালনার বিষয়ে পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করতে নির্দেশ দেন স্থানীয় বিধায়িকা় রত্না চ্যাটার্জী।
এই প্রসঙ্গে রত্না চ্যাটার্জী সোমবার জানান, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। বিশদে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ১২১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মীদের নিজেদের মধ্যেই কিছু দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বটাই এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “রূপক গাঙ্গুলী, সোমনাথ ব্যানার্জী (বাবন) প্রমুখের সঙ্গে অর্নব ব্যানার্জী, দেবজিৎ পান্ডে, বাবু টিকাদার, লাল্টু ঘোষদের একটা ঝগড়া চলছে। আমি তো সবে মাত্র বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছি, তবে ২/৪ দিনের মধ্যেই ওদের দুটো গ্রুপকে একসঙ্গে বসিয়ে সমস্যা মিটিয়ে দেবো। আর পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির নাম আমাকে দিতে বলেছি…..।”
ওয়ার্ড সভাপতি রূপক গাঙ্গুলীর সঙ্গে সোমবার ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “যারা গুলি চালিয়েছে ও নিরীহ মানুষদের মারধোর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী…।”
যার বিরুদ্ধে গুলি চালনায় মদত দেওয়ার সরাসরি অভিযোগ, সেই অর্ণব ব্যানার্জীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি তো ওইদিন ওই সময়ে বাড়িতেই ছিলাম, আমার পরিচিত একজন বললো, তোমার নামে টিভি-তে কি সব দেখাচ্ছে…! টিভি খুলে দেখি আমি নাকি গুলি চালনায় নেতৃত্ব দিয়েছি ! কোনও কোনও মিডিয়াতে কেউ কেউ বলছে আমি নাকি পুর নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার জন্য এসব করেছি ! কবে নির্বাচন হবে তার ঠিক নেই…. তার আবার টিকিট……! আমি এসবের মধ্যে নেই। আমার বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র চলছে ….” এমনটাই দাবি তৃণমূল নেতা অর্ণব ব্যানার্জীর।
তৃণমূল কর্মী দেবজিৎ পান্ডে জানান, এলাকায় গুলি চলার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এলাকার কিছু লোক তাদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মিথ্যা রটনা করছে। ভাস্কর সেন নামে যে ব্যক্তিকে ক্রিমিনাল বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, সেটাও ঠিক নয়। একসময় ভাস্কর সেন কিছুটা মস্তানি করলেও এখন সে একজন সজ্জন ব্যবসায়ী….মানুষ ভালো হতে চাইলেও কিছু মানুষ তাকে ভালো হতে দেবেনা। তিনি আরও বলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যম ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই ভুল ভাল খবর সম্প্রচার করেছে। এতে আমাদের বদনাম হচ্ছে…এগুলো ঠিক নয়।”
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক সোমনাথ ব্যানার্জী (বাবন) বলেন, এলাকার সমস্ত মানুষ জানেন গুলি চলেছিল কিনা ! দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে এলাকার বাসিন্দারা এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনা কভার করতে ছোট-বড় বিভিন্ন মিডিয়া এসেছিল, তাদের সামনেই বাসিন্দারা গুলি চলার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। তাহলে তারাও কি মিথ্যা কথা বলেছেন ? পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সত্য-মিথ্যা সব প্রকাশ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।