পশ্চিমবঙ্গ সহ ৩ রাজ্যের সীমান্তবর্তী থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত এলাকা বিএসএফ-এর হাতে দেওয়া হল, প্রতিবাদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক ঘোষণায় পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও অসমের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দরা কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ১৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গে সীমান্ত থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত এলাকা বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। একই ঘোষণা করা হয়েছে পাঞ্জাব ও অসম সম্পর্কেও।
এর আগে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১৫ কিমি অভ্যন্তর পর্যন্ত বিএসএফ-এর সরাসরি নিয়ন্ত্রনে থাকত। বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা একধাপে আরও ৩৫কিমি বাড়িয়ে দেওয়া হল। এর ফলে সীমান্ত থেকে ৫০কিমি এলাকা বিএসএফ ইচ্ছে মত গ্রেফতারি, যেকোনো জিনিস বাজেয়াপ্ত ও তল্লাশি করতে পারবে। এছাড়া বিএসএফ-এর হাতে সীমান্ত এলাকায় যে ক্ষমতা ছিল তাও বর্ধিত করা হলো।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৪১০০ কিমি দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। বিএসএফ এই সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে। এখন আরও বর্ধিত ৩৫ কিমি এলাকাও বিএসএফ-এর সরাসরি নিয়ন্ত্রনে চলে গেল। এর ফলে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা যেকোনো সময় সন্ধ্য কার্ফু আওতায় পড়তে পারে। এছাড়াও চাষবাস, গাবাদি পশু, ছোট ব্যবসা ও স্কুলে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অসুবিধার মধ্যে পড়বেন বলে বাসিন্দারা আশঙ্কায় রয়েছেন। কারণ অতীত অভিজ্ঞতায় সেটাই দেখা গেছে। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ও বিকাশমূলক কাজও বাধার সম্মুখীন হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে পাঞ্জাবের অর্ধেক এলাকা বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রনে চলে যাচ্ছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, কেন্দ্রের এক তরফা এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোর বিরোধী। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণা ধীন এলাকা বর্ধিত করলেও গুজরাতে কিন্তু তা কামানো হয়েছে। গুজরাতে আগে ৮০ কিমি পর্যন্ত বিএসএফ-এর আওতায় ছিল। এই ঘোষণার পর তা কমিয়ে ৫০কিমি করা হয়েছে।
দেশের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, পঞ্জাব, গুজরাত, রাজস্থান রাজ্যগুলির সঙ্গে পাকিস্তান, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অঞ্চল রয়েছে ৷ এবার সীমান্ত রক্ষায় অপারেশন আরও উন্নত করার অধিকার পেল বিএসএফ । এবার থেকে পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ আর অসমে আন্তর্জাতিক সীমান্তে 50 কিমি পর্যন্ত অঞ্চলে তল্লাশি বাজেয়াপ্ত আর গ্রেফতার (arrest) করতে পারবে এই সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৷ এর আগে এই পরিসর ছিল 15 কিমি পর্যন্ত ৷ তবে গুজরাত-পাকিস্তান সীমান্তে এই পরিসর 80 কিমি থেকে কমিয়ে 50 কিমি করা হয়েছে ৷ আর রাজস্থানের ক্ষেত্রে বর্তমানে 50 কিমি আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা অপরিবর্তিত রয়েছে ৷
১১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নোটিস জারি করে জানিয়েছে, ২০১8 এর জুলাই-এর একটি আইন সংশোধন করে সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে বিএসএফ-এর নিরাপত্তারক্ষী এবং আধিকারিকদের কার্যক্ষমতা বাড়ানো হল ৷ রাজস্থান, পঞ্জাবের সঙ্গে পাকিস্তানের এবং পশ্চিমবঙ্গ, অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ৷আরও পড়ুন : Border Arrest: সীমান্তে কোটি টাকার তক্ষক সহ পাকড়াও পাচারকারী2.65 লক্ষ নিরাপত্তারক্ষীর এই আধাসামরিক বাহিনী পাকিস্তান আর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ৬ হাজার ৩০০টি অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে ৷ বিএসএফ-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সংশোধন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অপরাধ দমন করতে সাহায্য করবে ৷ পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, রাজস্থান, অসমের সীমান্ত রক্ষা একটা “সঙ্গতি” আসবে ৷একটি বিবৃতিতে বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে, “ভারতের সঙ্গে গুজরাত, রাজস্থান, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম সীমান্তে আন্তর্জাতিক সীমার ৫০কিমি পর্যন্ত রক্ষণাবক্ষণের সীমা বৃদ্ধির ফলে সীমান্ত অঞ্চলে উন্নত মানের অপারেশন চালানো সম্ভব হবে ৷”
বিএসএফ আইনের সংশোধনের ফলে এই আইনের আওতায় কোনও অপরাধমূলক কাজকর্ম করলে, তাকে ধরতেও পারবে বিএসএফ ৷ আধাসামরিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় এবং জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের মতো জায়গাগুলিতে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার পেল