অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:-বৈকাল 5টা শুরু হয়ে গেল গোটা রাজ্য জুড়ে লকডাউন ।ক্রমশ ফাকা হতে শুরু করছে রাস্তাঘাট বাজার ,বন্ধ হতে শুরু করছে দোকান পাট। আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক ছড়াবেন না। সবাই বাড়িতে থাকুন। সতর্ক থাকুন। সবাই সুস্থ থাকুন। খুব দরকার না হলে বাড়ির বাইরে বেরবেন না। বাইরের কাজ কদিন পর করুন। বিদেশ থেকে কেউ এলে ১৪ দিন একদম বাড়ির মধ্যে থাকুন। নিয়ম মেনে চলুন। কোনও অবস্থাতেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।” করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া বার্তার পর এবার রাজ্যবাসীর কাছে আবদেন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। লক্ষ্য একটাই ‘ব্রেক দ্য চেন’। আর সেই লক্ষ্যে করোনার সংক্রমণ রুখতে ২৩ মার্চ বিকেল ৪টে থেকে ২৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সময়কালে জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সব বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। শুধু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মিলবে। লকডাউন পিরিয়ডে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে গণ পরিবহন। রেলে কার্ফু বলবৎ থাকবে। কোনও লোকাল, প্যাসেঞ্জার, দূরপাল্লার ট্রেন, মেট্রো চলবে না। চলবে শুধু পণ্যবাহী ট্রেনগুলি। পাশাপাশি, ৭ জনের বেশি কোথাও ভিড় না করতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। একদিনে ৮১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৫। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। পশ্চিমবঙ্গেও করোনায় আক্রান্ত ৭ জন। এই পরিস্থিতিতে দেশে করোনার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রুখতে কড়া সরকার। কিন্তু মানুষ এখনও সম্পূর্ণ সচতেন হচ্ছেন না, তাঁরা অযথা বাইরে বেরচ্ছেন বলে সোমবার সকালে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন সকালে টুইট করে মোদী বলেন, “অনেক মানুষ লকডাউনকে গুরুত্ব দিয়ে নিচ্ছেন না। দয়া করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। যথাযথভাবে নির্দেশিকা মেনে চলুন। আমি সমস্ত রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি আইন মেনে লকডাউন নিশ্চিত করুন।” কেউ আইন ভাঙলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এরপরই ফের আরেকবার রাজ্যবাসীর কাছে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার আবেদন করলেন
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭-এ। করোনায় আক্রান্ত নবান্নের সরকারি আমলার লন্ডন ফেরত পুত্র, বালিগঞ্জের লন্ডন ফেরত তরুণ ও তাঁর বাবা-মা এবং বাড়ির পরিচারিকা, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার স্কটল্যান্ড ফেরত ছাত্রী ও দমদমের প্রৌঢ়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত দমদমের ৫৭ বছর বয়সী প্রৌঢ়ের অবস্থা-ই সংকটজনক। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। করোনার পাশাপাশি তাঁর ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। তবে বাকি ৬ জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ বিকেল ৪টে থেকে ২৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই ‘ব্রেক দ্য চেন’। তা সফল করতে কেন্দ্রের পরামর্শে সম্মতি জানিয়ে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, বন্ধ থাকবে বেশিরভাগ দোকানপাঠ। বিকেল থেকে রাজ্যে কোনও গণপরিবহণ চলবে না বন্ধ থাকবে সব দোকান, অফিস, কলকারখানা, গোডাউন। ৭ জনের বেশি মানুষের জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হাসপাতাল, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পরিবহণ লকডাউনের আওতায় পড়বে না। খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বহনকারী গাড়িগুলিকেও ছাড় দেওয়া হবে। আদালত, সংশোধনাগার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুলিস, আধাসেনা, বিদ্যুত্, জল, দমকল, জরুরি পরিষেবা, ব্যাঙ্ক, ATM, সবজি, ফল, মাছ-মাংস, দুধ, পাউরুটি আওতার বাইরে থাকবে। পেট্রোল পাম্প, রান্নার গ্যাস, ওষুধের দোকান ও সংবাদমাধ্যমও শাটডাউনের আওতায় থাকবে না।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রুখতে আগেই আন্তঃরাজ্য বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ২১ তারিখ মধ্যরাত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভিন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে কোনও যাত্রীবাহী বাস আসবে না এবং যাবে না। ৩১ মার্চ পর্ষন্ত দেশব্যাপী রেলেও কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময় পণ্যবাহী ট্রেন ছাড়া কোনও লোকাল, প্যাসেঞ্জার, এক্সপ্রেস ও মেট্রো চলবে না।