উদ্বেগ:
সুরাহা কবে হবে, চিন্তায়।
কত আর বয়স হবে কৃতিকার! মোটে ছয়। বাবার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সে। ধরা গলায় মাঝে মাঝে বলে উঠছে, ‘‘আমার আর কিছু লাগবে না, বাবা!’’
আট মাস ধরে বেতন বন্ধ। সে জন্য পথে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছেন। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে নিজেকে ভিতরে ভিতরে অনেকটাই শক্ত করে ফেলেছেন গৌতম। কিন্তু ছ’বছরের মেয়ের কথা শুনে তাঁর চোখও ভিজে যায়। তাকে কাছে টেনে বলেন, ‘‘তুই কিছু ভাবিস না মা…’’
কিন্তু ভাবনার কি আর শেষ আছে! গৌতম বাগচী, বিএসএনএলের চুক্তিভিত্তিক কর্মী, মেয়েকে এর মধ্যেই ছাড়িয়ে নিয়েছেন বেসকারি দামী স্কুল থেকে। ভর্তি করেছেন সরকারি স্কুলে। সেখানেও টাকা দিতে ভাঙতে হয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড।
তাই উমা যখন আসছে বাপের ঘরে, তখন মেয়ের মুখের দিকে চাইতে পারছেন না গৌতম। বলতেও পারছেন না, ‘‘আসছে বছর তোকে আরও ক’টা জামা কিনে দেব।’’
বলতে পারছেন না, কারণ আসছে বছর ভবিষ্যতের তলায় চাপা পড়ে আছে, যার উপরে রয়েছে অর্থনীতির হাজার একটা অনিশ্চয়তা। এমনকি কানাঘুষো চলছে, বিএসএনএল হয়তো উঠে যাবে এ বারে!
বলতে পারছেন না, কারণ সামনের বছর তো দূর, এখনই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ‘‘কী ভাবে যে চলছে, কেউ ভাবতে পারবেন না,’’ কপাল টিপে বসে বলছিলেন গৌতম। এই বয়সে নতুন চাকরি কী করবেন, তারও কোনও দিশা নেই।
ফুলবাড়ির এই যুবকের বাড়ির সঙ্গে যেন মিলে হায়দরপাড়ার উত্তম পালের পরিবার। মিলিয়ে দেয় বিএসএনএল-ই। বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে ভরা সংসার গত কয়েক মাস ধরেই বেসুরো। বেশ কয়েক মাস যাবত বিএসএনএলের এই কর্মীর ঘরেও ঢোকেনি বেতন। ‘‘বৃদ্ধ বাবার কাছে হাত পেতে সংসার চালাচ্ছি এখন,’’ বলছিলেন উত্তম। সংসারের মুখ চেয়ে সেলাইয়ের কাজ ফের শুরু করেছেন উত্তমবাবুর বাবা সুকুমার পাল। বললেন, ‘‘কী করব, সংসারটা তো চালাতে হবে!’’
পুজোর রোশনাই যেন থমকে দাঁড়িয়েছে পাল বাড়ির চৌকাঠে এসেও। তবু সুকুমারবাবু কথা দিয়েছেন নাতি দীপ্তমকে, পুজোয় কিনে দেবেন নতুন জামা। কাজ চালাচ্ছেন তাই।
বিএসএনএলের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা রাজীব মণ্ডলের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএনএল ছাড়াও বেশ কিছু সংস্থা নিলাম করে দিতে চাইছেন। কিন্তু এই চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা এই বয়সে কোথায়, কী ভাবে নতুন কাজের সন্ধান পাবেন?’’
তাই আলোর উৎসবের মুখে ওঁদের সংসারে এখন আঁধার। তাই কৃতিকাকে বুকে টেনে গৌতম অস্ফুটে শুধু বলতে পারেন, ‘‘দেখিস…।’’ তাই দীপ্তমের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন উত্তম।
সৌজন্য:- আনন্দ বাজার পত্রিকা
ছবি:- প্রতীকি
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/tea.jpeg)
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/Ads.jpeg)