ঠাকুরপুকুরে রিয়েল এস্টেটের ব্যাবসা ফেঁদে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার সংস্থার মালিক
(প্রথম কিস্তি…..)
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : একের পর এক ধানক্ষেত-জলা-ঝিল-নীচু জমি ভরাট করে চলছে রিয়েল এস্টেটের রমরমা ব্যাবসা। ছোট থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যাবসায়ীরাও এখন লাভজনক এই ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। কম দামে জমি বিক্রির আশ্বাস দিয়ে শহর ও শহরতলীতে বড় বড় বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে একশ্রেণীর প্রতারক ব্যবসায়ী। আর ঠিক এমনটাই ঘটেছে ঠাকুরপুকুর অঞ্চলে সস্তায় জমি বিক্রির আশ্বাস দিয়ে সম্প্রতি কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করার ঘটনা। “দেওয়ান ডেভালপার্স প্রাইভেট লিমিটেড” নামের একটি সংস্থা সস্তায় জমি বিক্রির আশ্বাস দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল। পরে অবশ্য প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে দেওয়ান ডেভেলপার্স-এর মালিক দীপক মণ্ডলকে। এরই মধ্যে আরও ভুঁড়ি ভুঁড়ি প্রতারণার আভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটের নামে। ইতিমধ্যেই পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আভিযোগ, ঠাকুরপুকুর পার করে হাঁসপুকুরে জোকা মেট্রো স্টেশনের কাছেই মহেশতলা ব্লকের আশুতি-১ ও আশুতি-২ পঞ্চায়েত এলাকায় কম দামে কিস্তিতে জমি বিক্রির আশ্বাস দিয়েছিল “দেওয়ান ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডে”র মালিক দীপক মণ্ডল। সেই ফাঁদে পা দেয় শ’য়ে শ’য়ে ক্রেতা। তারপর কয়েক’শো জমি-ক্রেতাদের দেওয়া অগ্রিম ও কিস্তির কোটি কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দীপক। অভিযোগে প্রকাশ, সে জমির ক্রেতাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জমি বুকিং-এর সময় প্রথমে একটা মোটা টাকা অগ্রিম দিতে হবে। বাকিটা মাসিক মাত্র ৫ হাজার টাকা করে ৩ বছরে শোধ করতে হবে। তার দেওয়া এই লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়েছিল শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। কিন্তু সম্পূর্ন টাকা শোধ হওয়া সত্ত্বেও জমি পাননি ক্রেতারা কেউই।
শুধু তাই নয়, দেওয়ান ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের পাশেই রয়েছে “সোনাক্ষী রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট” নামের অন্য একটি সংস্থা। তাদেরও জমি বিক্রির ভুয়া আশ্বাস দিয়ে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় দীপক মন্ডল নামের ওই ব্যক্তি। তাদের আভিযোগ, তাদেরকে ৫০ বিঘা ভুয়া জমি দেখিয়ে ৩ কোটি টাকায় বিক্রির চুক্তি করে সে। তারপর মৃত মানুষের সই জাল করে ২৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম নেয়। বাকি ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার পোষ্ট ডেটেড চেক (PDC) নেয় সে। পরে সোনাক্ষীর কর্ণধাররা সবকিছু জানার পর ওই PDC বাতিল করে দেন। কিন্তু অগ্রিম দেওয়া ওই ২৫ লক্ষ টাকা তারা আর ফেরৎ পাননি বলে আভিযোগ। দীর্ঘদিন হন্যি হয়ে খুঁজেও দীপকের খোঁজ পাননি জমির অন্যান্য ক্রেতারাও। এরপর সোনারপুরের বাসিন্দা দীপক মণ্ডলের নামে বেশ কিছুদিন আগে ঠাকুরপুকুর ও সোনারপুর থানায় রুজু হয় প্রতারণার অভিযোগ। ২৮ জন ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসন নড়ে-চড়ে বসে। শেষমেষ মঙ্গলবার ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ অভিযুক্ত দীপককে গ্রেফতার করেছে। এরই মধ্যে তার নামে এবং অন্যান্য বেশ কিছু রিয়েল এস্টেটের কর্নধারদের নামেও ভুঁড়ি ভুঁড়ি প্রতারণার আভিযোগ আসতে শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর।
(পরের পর্বে… “জমি প্রতারণা”র আরও খবর….)