ড্রাগোন ফ্রুট—লিভার রিজুভিনেটর: লিখছেন—ডাঃ ইয়ার আলী

Spread the love

ড্রাগোন ফ্রুট—লিভার রিজুভিনেটর: লিখছেন—ডাঃ ইয়ার আলী

প্রতিবেদন,স্বাস্থ্যডেস্ক:- অঞ্চলগুলিতে সবে পরিচিত হয়ে উঠেছে একটি ফল—নাম ড্রাগোন ফ্রুট৷ অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন, এই ফল আমাদের স্বাস্থের জন্য কেমন উপকারী?
তাই আজকে এই ফল সম্পর্কে কয়েকটি কথা৷
সবুজ বিপ্লবের ফলে আমাদের চাষের ব্যাপক সফলতা আসেছে সন্দেহ নাই৷ কিন্তূ, যে রাসায়নিক ও পেস্টিসাইড ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের শস্য ও ফল শব্জীর ব্যাপক সমৃদ্ধি ঘটালাম— তা পরোক্ষভাবে আমাদের খাদ্যকে,পাণীয়কে বিষাক্ত করে তুলল৷ পেস্টিসাইডের ও এই জাতীয় সকল প্রকার বস্তুতে প্রচুর পরিমাণে হেভি মেটাল বা ভারি ধাতব পদার্থ ব্যবহৃত হয়৷ যেমন—মার্কারী বা পারদ, কপার বা তামা, আর্সেনিক, এলুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি৷ এছাড়াও অর্গানোফসফরাস আছে৷ এই সমস্ত বিষগুলি শস্যে,শব্জীতে,ফলে, ফসলে কিছুটা পরিমাণে সন্চিত ও জমা হচ্ছে৷ সেই খাবারগুলি আমরা নিয়মিত বাঁচার জন্য খাচ্ছি৷ গৃহিত খাদ্যের মধ্যে বিরাজমান বিষগুলির কিয়দংশ আমাদের দেহে প্রবেশ করে লিভারে জমা হচ্ছে৷ লিভারের ধারণক্ষমতা সীমা অতিক্রম করলে, রক্তের মধ্যে মিশ্রিত হচ্ছে৷ বিভিন্ন অর্গানে পরিবাহিত হয়ে জমা হচ্ছে৷ ফলে, অক্সিডেটিভ ইনজুরি হচ্ছে বিভিন্ন কোষে,অর্গানে৷ লিভারেরও বার্ডেন বাড়ছে৷ লিভারের বিভিন্ন কোষ ইনজুরি হচ্ছে৷ প্রথমতঃ লিভার যে কোন ক্ষতিকর বস্তূগুলিকে আগে ফিল্টার করে বাইল দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ তারপরও ,কিছুটা লিভারে বিভিন্ন লবুউলে সেই বিষগুলিকে শক্তভাবে সন্চিত করে রাখে যাতে করে রক্তে না মিশ্রিত হয়৷ লিভারে কার্যক্ষমতার শেষমহুর্ত পর্যন্ত এই কাজটি অনবরত করেই চলেছে৷ যখন লিভারের ক্ষমতা কমে যায়, তখন সেই বিষগুলি হেপাটিক ভেইন দিয়ে ব্লাড সার্কুলেশনে চলে আসে৷

এরপরও, বর্তমানের টেকনোলজিক্যাল বিশ্বায়নের যুগে সূর্যের UV রশ্মি, বিভিন্ন রেডিয়েশনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষাক্ত তেজস্বি কণাগুলি প্রতিনিয়ত আমাদের জলে,বাতাসে,খাদ্য, শরীরে প্রবেশ করছে৷ তেজস্বি কণাগুলি আমাদের বিভিন্ন কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলির ব্যাঘাত ঘটায়৷

আবার, দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল যুগের প্রেক্ষাপটে আমাদের মানসিক টানাপোড়েন,উত্তেজনা,আবেগ, উৎকন্ঠা,ভয় ভীতি প্রভৃতি সুপ্রারেনাল গ্লান্ড থেকে ক্ষতিকর, এসিডিক, এক্সজস্টেড এড্রিনালিন সিক্রেশন করছে৷ এই হরমোন সর্বদা ব্লাডে সার্কুলেট করার জন্য বিভিন্ন অর্গানে ক্ষতি করছে৷ লিভারে ক্ষতিকর এড্রিনালিন সন্চিত হচ্ছে৷ লিভার বেশী বেশী বার্ডেন হচ্ছে৷ প্রতিনিয়ত, অনবরত প্রায় ২০০০ মত যে কেমিক্যাল ফাংশনগুলি লিভার করছে,সেগুলি ব্যহত হচ্ছে৷ যত কাজ ব্যহত হচ্ছে—ততই আমাদের দেহে একটা একটা করে সমস্যা এড হচ্ছে৷ আমাদের বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে৷

আবার, GMO foods ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মত কাজ করছে! আজকাল, ক্ষেত থেকে ফসল তুলে এনে, তার থেকে কিছুটা বীজ হিসাবে সংরক্ষন করে পরবর্তিতে চাষ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে৷ প্রত্যেক ফসলের বীজ কিনেই চাষ করতে হবে৷ নতুবা, ফলন কম হবে বা হবেনা! কিংবা পোঁকার উৎপীড়ন অত্যাধিক হবে৷ কার্যতঃ GM বীজ ছাড়া চাষ অসম্ভব! GMO খাদ্যগুলি আমাদের বিভিন্ন অর্গানের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে দেয়৷ ভবিষ্যত প্রজন্মকে অসুস্থ রাখা ও তাদের জীবন-ধারা বিনষ্ট করতে সহায়ক৷

এছাড়াও, আরও বহুবিষগুলি লিভারের বিভিন্ন স্তরে স্তরে সন্চিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের অজান্তেই৷
মানুষের পূর্বপুরুষের জীবন ধারা, তার নিজের গতিবিধি, জীবন-ধারা, খাদ্যের অভ্যাস, পেশার ভিন্নতা,মানসিক অবস্থা, বিষের এক্সপোজার প্রভৃতির ভিন্নতা অনুযায়ী এবং ব্যক্তির দেহে বা রক্তে বিভিন্ন ভাইরাসের বা প্যাথোজেনের উপস্থিতি অনুযায়ী— একজন ব্যক্তি লিভারের কার্যক্ষমতা বিভিন্ন বয়সে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছে৷ ফলতঃ বিভিন্ন অসুখগুলি ক্রমশঃ প্রকাশ পাচ্ছে৷ যেমন—
গ্যাসের সমস্যা,পায়খানার সমস্যা, ওজনের সমস্যা, ভূঁড়ির সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, মাংশ পেশীর,ঘাড় পিঠের ব্যথার সমস্যা, মহিলাদের জরায়ু, তলপেটের নানা সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা, প্রেসারের সমস্যা,সুগারের সমস্যা, নার্ভের ব্যাথার সমস্যা, জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা ইত্যাদি৷

“স্বাভাবিক লিভার>কনজেস্টেড লিভার>ম্যালফাংশনাল লিভার>ফ্যাটি লিভার>সিরোসিস লিভার>ফেলুউর লিভার”

এইভাবে ,বিভিন্ন পর্যায়ে লিভার তার ক্ষমতা হারাতে থাকে আর আমাদের দেহে একটার পর একটা সমস্যা বা রোগ যোগ হতে থাকে৷
” হার্ট আমাদের পেসমেকার কিন্তূ লিভার আমাদের পিসমেকার”— এই কথাটা সর্বদা স্মরণে রাখতে হবে৷

এই লিভারকে সর্বদা সাপোর্ট দিতে হবে যাতে করে সেটি সকল বিষগুলিকে বের করে দিতে পারে, মৃত বা দূর্বল হয়ে যাওয়া লিভার কোষগুলি পুণঃরায় সতেজতা ও কার্যক্ষমতা ফিরে পায়৷
উপযুক্ত ডায়েট, খাদ্যতালিকা, ফুড সাপ্লেমেন্টস, ফল,শব্জী,হার্বস, ওষুধের মাধ্যমে লিভারকে আমরা সহায়তা করতে পারি৷

এইরকমই একটা সহায়তা হল—রেড পিটায়া বা ড্রাগোন ফ্রুট৷ লিভারের রিজুভেনেটর হিসাবে কাজ করে এই ফলটি৷ লিভারে সন্চিত বিভিন্ন বিষগুলিকে পিত্তের মাধ্যমে পায়খানা দিয়ে বের করে দেয়৷ প্রত্যেক দূর্বল লিভার কোষগুলিকে পুণঃশক্তিশালী করে৷ লিভার কোষের রিজেনরেশনে দারুনভাবে সহায়ক৷ লিভারের বুড়িয়ে যাওয়াকে (aging) প্রতিরোধ করে৷

ড্রাগোন ফ্রুট সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে চাষ করে , নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷ লিভারকে সুস্থ রেখে ,দেহকে সুস্থ রাখার সংকল্প করুন৷
মানুষের শরীরে ধ্বংসাত্বক বিষগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা করুন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.