আচমকা মানব শরীরে দেখা দিল ‘লেজ’! NRS মেডিক্যাল কলেজে সার্জারি

Spread the love

অভিরূপ দাস: – এ এক আজব ঘটনা ,মানব শরীরে লেজ ,কুড়ি লক্ষ বছর আগের জিনিস। দেখা দিল নাকি শরীরে? এমন চিন্তাতেই ঘুম কাবার হয়েছিল বাঁকুড়ার কাঠজুড়িডাঙার মলিনা কর্মকারের। শরীরে লেজ বেরিয়েছিল। চিত হয়ে শুতেই পারতেন না তিনি। বিবর্তনের সরণি বেয়ে লেজ খসিয়েছে মানুষ। ছোট হতে হতে পায়ুদ্বারের উপরে লেজ এখন ‘ককফিক্স’। ছোট্ট একটা হাড়। সেখানেই উঁচুমতো কী একটা বেরোতে মাথায় হাত বছর একান্নর মহিলার। বিছানাতে শুতে গেলেই তা তোশকে ঠেকত। উপুড় হয়ে শুতে হত সবসময়। আচমকা শরীরে ‘লেজ’ দেখা দেওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরাও। মানুষ থেকে কি ফের শিম্পাঞ্জির পথে এগোচ্ছে ঘরের বউ?

চিকিৎসার জন্য প্রথমটায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে  যান মলিনাদেবী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানে জানানো হয় লেজের মতো জিনিসটি আদতে টিউমার। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে সফট টিস্যু টিউমার। কিন্তু টিউমারটি এমন অদ্ভুত জায়গায় সচরাচর দেখা যায় না। কলকাতায় রেফার করা হয় মলিনাদেবীকে। শহরে এসে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হন তিনি। ২৬ জানুয়ারি এনআরএসের সার্জারি বিভাগে আসেন। সেখানে পরীক্ষা করতে গিয়েই চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা ওই টিউমার আদতে কার্সিনোমা। অর্থাৎ ক্যানসারের কোষ রয়েছে ওতে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের  সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, এখানে আসার পর রোগীর ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং টেস্ট করা হয়। করা হয় কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি। দেখা যায় পায়ুদ্বারের উপরে যে হাড় সেই ককফিক্সে টিউমারটি আঠার মতো লেগে আছে। তাকে বাদ দেওয়া খুব সহজ ছিল না। অগত্যা টানা তিন ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে ওই ককফিক্সটাই কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য কোনও সমস্যা হবে না রোগীর।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আদিম মানুষের লেজ বিবর্তন হতে হতে যে ছোট্ট হাড়ের মতো হয়েছে তা আদৌ কোনও কাজে আসে না। ওই অংশটা কেদে বাদ দিয়ে দেওয়ার পর অনেকটা মাংসও বাদ যায় শরীরের। ডান দিকের নিতম্ব থেকে মাংস কেটে ফের সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্টারি পারফোরেটর ফ্ল্যাপ পদ্ধতিতে মাংস কেটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ওখানে। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. উৎপল দে। সমগ্র পদ্ধতিতে অ্যানাস্থেশিস্ট ছিলেন দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচারের পর আপাতত ভাল আছেন মলিনা। রোগীর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, আদৌ যে টিউমার হয়েছে তা-ই আমরা জানতাম না। প্রথমটায় ভেবেছিলাম হয়তো লেজই গজিয়েছে। নীলরতনে এসে জানলাম লেজ আসলে একটা ক্যানসারাস টিউমার।

 

সৌজন্য :- সংবাদ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.